বাদী পক্ষের হয়ে স্বাক্ষ্য প্রদান করছে নুসরাত জাহান রাফির দুই বান্ধবী ও সহপাঠী নিশাত সুলতানা ও নাসরিন সুলতানা ফূর্তি। সোমবার (০১ জুলাই ) সকাল সাড়ে ১১টায় ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে স্বাক্ষ্য গ্রহণের তৃতীয় দিনে নিশাত সুলতানা প্রথমে সাক্ষ্য প্রদান করছে। এর পরে সাক্ষ্য প্রদান করার কথা রয়েছে নাসরিন সুলতানা ফূর্তির।
এই সময় আদালতের কাঠগড়ায় আলোচিত এই মামলার মোট ১৬ আসামীও হাজির ছিলেন।আদালত সূত্রের বরাত দিয়ে সরকারী কৌঁসুলী (পিপি) হাফেজ আহাম্মদ এমন তথ্য জানিয়েছেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) মামলার বাদী নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান সাক্ষ্য প্রদান করেন এবং আসামী পক্ষের ১৬ আইনজীবী তাকে জেরা করে। জেরা শেষ হয় রবিবার (৩০ জুন)।
বাদী পক্ষের আইনজীবী শাহজাহান সাজু বলেছেন, আদালতে আজ সাক্ষ্য প্রদান করছে নুসরাত জাহান রাফির বান্ধবী নিশাত সুলতানা ও নাসরিন সুলতানা ফূর্তি।
এর মধ্যে নিশাতকে মেরে ফেলছে বলে হত্যাকান্ডর দিন নুসরাতকে ছাদে ডেকে নিয়ে যায় হত্যাকারীরা। অপর বান্ধবী নাসরিন সুলতানা ফূর্তিকেও যৌন হয়রানী করে সোনাগাজী ইসলামীয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) অভিযোগ গঠনের ৬ দিনের মাথায় ৯২ জন সাক্ষীর মধ্যে বাদী পক্ষের ৩ জন সাক্ষীকে আদালতে তাদের সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য উপস্থাপন করেন। বৃহস্পতিবার (২০জুন) আদালত সাক্ষ্য গ্রহণের এই আদেশ দেন।
এ মামলার চার্জশিট জমা দেয়ার আগে ৭জন সাক্ষী আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত গত ৬ এপ্রিল ওই মাদ্রাসা কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে গেলে কৌশলে ছাদে ডেকে নিয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে করা শ্লীলতহানির মামলা তুলে না নেওয়ায় তাকে হত্যা করা হয় বলে মৃত্যুশয্যায় নুসরাত বলে গেছেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফেনীর পিবিআই পরিদর্শক মো. শাহ আলম আদালতে মোট ১৬ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র জমা দেন।
অভিযোগপত্রের ১৬ আসামি হলেন- সোনাগাজীর ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা, নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সোনাগাজীর পৌর কাউন্সিলর মাকসুদ আলম,সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, হাফেজ আব্দুল কাদের, আবছার উদ্দিন, কামরুন নাহার মনি, উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা, আব্দুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন ওরফে মামুন, মোহাম্মদ শামীম, মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সহ সভাপতি রুহুল আমীন ও মহিউদ্দিন শাকিল। এ মামলায় মোট ২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। অন্য পঁচজনকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করে পিবিআই। আদালত তা অনুমোদন করে।
এ ঘটনায় তিন পুলিশ সদস্যের দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ মিলেছে। এছাড়া যৌন হয়রানির মামলার পর নুসরাতের জবানবন্দি গ্রহণের সময় তার ভিডিও ধারণ করে তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে সাইবার আইনে মামলা হওয়ার পর সোনাগাজী থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সম্পাদনা : এএএম/এটি