আজ

  • সোমবার
  • ৯ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ২৪শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘কলারম্যান’ স্বীকৃতিহীন এক পেশা

  • নুর উল্লাহ কায়সার
  • বাস এসে থামলেই হাঁকডাক শুরু করেন তারা। হাঁকডাক ও দরদাম করে যাত্রীবাহী বাসে যাত্রী তুলে দেওয়াই তাদের কাজ। এর বিনিময়ে বাসের চালক বা কন্ডাক্টর কিছু টাকা দেন। এদেরকে ‘কলারম্যান’ বলেই ডাকেন বাসচালক, কন্ডাক্টর, হেলপারসহ সংশ্লিষ্টরা।

    ‘কলারম্যান’ হামিদ ফেনীর মহিপালে প্রায় ২০ বছর ধরে কাজ করছেন। শুরুতে তিনি মহিপাল-ঢাকা রুটে বাসের হেলপার ছিলেন। এক পর্যায়ে অসুস্থতার কারণে বাসে আর নিয়মিত চাকরি করা হয়নি। পরে মহিপালে বিভিন্ন রুটের গাড়িতে ‘কলারম্যান’ হিসেবে যাত্রী ডাকেন। এতে দৈনিক ৫-৭শ টাকা রোজগার হয়, যা দিয়ে কোনোরকমে চলে তার সংসার।

    হামিদের মতো অনেকেই এ কাজ করছেন। কিন্তু এ কাজের পেশাগত কোনো ধরনের স্বীকৃতি নেই। নেই কোনো সংগঠনও। যতদিন কাজ আছে কোনোরকমে দিন চললেও শেষ জীবন আর্থিক অনটনে দুঃসময় আর হতাশায় কাটে ‘কলারম্যান’দের।

    সম্প্রতি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মহিপালে দেখা যায়, ঢাকামুখী লেন, চট্টগ্রামমুখী লেন ও নোয়াখালীমুখী লেনে কয়েকজন মানুষ হাঁকডাক দিয়ে যাত্রীবাহী বাসে দরদাম করে যাত্রী তুলে দিচ্ছেন। দেখলে মনে হয়, এরা বাসের কর্মচারী অথবা হেলপার। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এরা বাসের কেউ নয়। বাসের চালক, হেলপাররা এদের মাধ্যমে হাঁকডাক দিয়ে যাত্রী সংগ্রহ করেন এবং যাওয়ার সময় এদেরকে কিছু কমিশন দিয়ে যান। এভাবেই দিনভর বিভিন্ন বাসে যাত্রী তুলে দেন ‘কলারম্যান’রা। এর মাধ্যমে যা আয় হয় তা দিয়েই চলে সংসার। ফেনীর মহিপালে ‘কলারম্যানে’র কাজ করেন অন্তত ৪০-৫০ জন।

    টিপু নামের এক কলারম্যান জানান, প্রখর রোদ অথবা ঝড়ের সময়ও আমরা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা বাসগুলোতে ডেকে ডেকে যাত্রী তুলে দেই। কিন্তু আমাদের কেউ যখন অসুস্থ হয় অথবা কোনো রোগে আক্রান্ত হয় তখন পাশে কেউ থাকে না। কলারম্যানদের কোনো নেই। সংগঠন থাকলে অন্তত দুঃসময়ে পাশে পাওয়া যেত।

    কলারম্যান সালাম মিয়া জানান, দেশের সব কাজেরই পেশাগত স্বীকৃতি ও অবস্থান আছে। কিন্তু আমাদের এ কাজের কোনো স্বীকৃতি নেই, সম্মানও নেই। এ কাজের কোনো নামও নেই। কেউ বলে দালাল, কেউ বলে ব্রোকার, আবার কেউ বলে কাঙালি। সমাজের সাধারণ মানুষ আমাদের সাথে আত্মীয়তা করতে চায় না। নানাভাবে আমাদেরকে কটাক্ষ করে, হেয় করে। অথচ আমরা দূর-দূরান্ত থেকে আসা বাসগুলোকে সহযোগিতা করে যাত্রী দিয়ে ভরে দেই। আমরা না থাকলে বাসের ভেতর অপেক্ষমান যাত্রীদের সময় নষ্ট হতো।

    তিনি আরও বলেন, যখন আমরা যাত্রী তুলে দেওয়ার পরও টাকা না দিয়ে কোনো গাড়ি চলে যায়, তখন খুব খারাপ লাগে।

    ফেনী ট্রিবিউন/এইচই/এএএম


    error: Content is protected !! please contact me 01718066090