ফেনীতে বড় ভাই জহিরুল হককে গরম তেলে ঝলসে হত্যা মামলায় ছোট ভাইকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেছে আদালত। এছাড়া আসামী ছোট ভাইয়ের ৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে আদালত। তার নাম নিজাম উদ্দিন। তিনি ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের সাপুয়া গ্রামের মৃত নুরুল হক মিয়ার ছেলে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে ফেনীর জেলা ও দায়রা জজ ড. বেগম জেবুন্নেছা এ রায় ঘোষনা করেন। রায় ঘোষনার সময় আসামী নিজাম উদ্দিন আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। পরে তাকে পুলিশের মাধ্যমে ফেনী জেলা করাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ২৬ মার্চ সকালে ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের সাপুয়া গ্রামের একটি চায়ের দোকানে পারিবারিকে বিরোধের জের ধরে বড় ভাই জহিরুল হকের সাথে ছোট ভাই নিজাম উদ্দিনের পারিবারিক বিষয়াদি নিয়ে কথা কাটাকাটি ও তর্কবিতর্ক শুরু হয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই এক পর্যায়ে নিজাম উদ্দিন ক্ষিপ্ত হয়ে দোকানে কড়াইয়ের মধ্যে থাকা গরম তেল বড় ভাইকে ছুঁড়ে মারেন। এতে বড় ভাইয়ের শরীরের বুক ও মুখমন্ডলী ঝলসে যান।
স্থানীয় লোকজন তাকে মুমুর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে ফেনী ২৫০ শয্যার হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরদিন আশঙ্কাজনক অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার জন্য জহিরুল হককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় মারা যান জহির। এ ঘটনায় তার স্ত্রী ফাতেমা আক্তার বাদি হয়ে ৪ এপ্রিল নিজাম উদ্দিনকে আসামী করে দাগনভূঞা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। দায়েরের পর আসামী নিজাম উদ্দিন গ্রেপ্তার হয়। তিনি ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ফেনীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মশিউর রহমান ২০২০ সালের ২১ জানুয়ারি নিজাম উদ্দিনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশীট জমা দেন। চার্জশীটে ভুল থাকায় ওই বছরের ১ নভেম্বর মামলাটি পুন:তদন্তের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেন আদালত। এরপর একই বছরের ২০ ডিসেম্বর মামলাটির অভিযোগপত্র জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. মোবারক হোসেন। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ১৩ জন সাক্ষীকে আদালতে উপস্থাপন করা হয়। গত ২০২১ সালের ১১ অক্টোবর আসামী নিজাম উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচারকাজ শুরু হয়।
ফেনীর আদালতের সরকারী কৌসুলী (পিপি) হাফেজ আহম্মদ বড় ভাইকে গরম তেলে ঝলসে হত্যা মামলায় ছোট ভাইকে বাংলাদেশ দন্ডবিধির ৩৬০ ধারায় ১০ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করার সত্যতা নিশ্চিত করেন।
ফেনী ট্রিবিউন/এএএম/এটি