প্রতিদিনের মতো সকালে অফিসে আসেন ফারইস্টের ১০ কর্মকর্তা। তখনো জানতেন না একটু পরেই তাদের জন্য অপেক্ষা করছে চরম দুঃখজনক সংবাদ। সবাই যথারীতি তাদের কম্পিউটার খুলে তাদের আইডিতে লগইন করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু কেউ লগইন করতে পারছেন না। এরপর একে অপরের সাথে বলাবলি করছেন আমি আমার আইডিতে ঢুকতে পারছি না। একটু পরেই তারা জানতে পারলেন যে তাদেরকে কোম্পানি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে কোন প্রকার পূর্বঘোষণা ব্যতীত।
অথচ এই কর্মকর্তারা গতকাল রবিবার রাত ৯ টা পর্যন্ত ডিসেম্বর ক্লোজিংয়ের কাজ শেষ করে অফিস থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। কর্মকর্তারা প্রতিদিনের মতোই দুপুরের খাবার নিয়ে অফিসে এসেছেন, কিন্তু সেই খাবার নিয়ে আবার তাদেরকে ফিরে যেতে হল কর্মস্থল ছেড়ে বাসায়। এই ঘটনাটি ঘটেছে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড ফেনী সার্ভিস সেন্টার এর আওতাধীন বিভিন্ন জোনাল অফিসে।
এর মধ্যে চাকরি হারিয়েছেন কোম্পানির সার্ভিস সেন্টারের অবলিখন বিভাগের এভিপি শাহাদাত হোসেন, এফএভিপি শহীদুল্লাহ, অফিসার আনোয়ার হোসেন, সিনিয়র অফিসার রুহুল আমিন, সৈয়দ একরামুল হক, সার্বজনীন বিভাগের এক্সিকিউটিভ অফিসার কুদরতুল্লাহ , সিনিয়র অফিসার শামসুন্নাহার , সোনাগাজী জোনাল অফিসের এভিপি নুরুল আলম, এক্সিকিউটিভ অফিসার নুরনবী ও অফিসার শাহাদাত হোসেন। শুধু এই ১০ জন নয়, বৃহত্তর নোয়াখালী ডিভিশনের ২৭জন কর্মকর্তাকে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত চাকরীচ্যুত করেছে কোন প্রকার নোটিশ ছাড়াই কোম্পানিটি।
সোমবার কোম্পানিটির ফেনী সার্ভিসিং সেন্টারে গিয়ে দেখা গেছে হঠাৎ করেই একসাথে সার্ভিসিং সেন্টার এর ৫ জন কর্মকর্তা চাকরীচ্যুত হওয়ায় অফিসের বিভিন্ন টেবিল খালি পড়ে রয়েছে।
কর্মকর্তাদের চাকরীচ্যুত করা হলেও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে নতুন কাউকে পোস্টিং না দেওয়ার ফলে সেবাগ্রহীতাদের দৈনন্দিন সেবা নিতে এসে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন।
চাকরীচ্যুত একরামুল হক জানান, আমি গত কালকে ছুটিতে ছিলাম। আজকে অফিসে এসে দেখি আমার চাকরি নেই। ম্যাচিউরিটির শতশত ফাইল আমার হাতে জমা।আমি কার কাছে এগুলো বুঝিয়ে দিয়ে যাবো তাও জানিনা।
শহীদুল্লাহকে দেখা যায় প্রতিদিনের মতো তিনি হটপটে ভাত নিয়ে এসেছেন। আবার সেই ভাত নিয়েই ফিরে যাচ্ছেন বাসায়। এছাড়া অবলিখন বিভাগে রুহুল আমিন রয়েছেন ছুটিতে। তিনি জানেনও না যে তার চাকরি চলে গেছে।
কোম্পানির এমন হঠকারী সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ মাঠ পর্যায়ের কর্মী এবং অফিসের কর্মকর্তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, সকালে অফিসে এসে দেখেন চাকরি নেই ।এটি আসলে দুর্ভাগ্যজনক। করোনার মধ্যে চাকরি হারাদের পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা চিন্তা করে কোম্পানি হয়তো তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবেন বলেও তারা জানান।
এ বিষয়ে ফেনী সার্ভিস সেন্টারের ইনচার্জ নাসির উদ্দিন জানান, এটি কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত। এই বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।
ফেনী ট্রিবিউন/এএএম/এটি